নবজাতকের পরিচর্যা কীভাবে করতে হবে- এ বিষয়ে বলেছেন অধ্যাপক ইসরাত জাহান লাবণী
বয়স ও ঋতুভেদে নবজাতকের পরিচর্যার বিভিন্নতা রয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ইসরাত জাহান লাবণী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিউনেটলজি অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : নবজাতকের নাভি কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে?
উত্তর : জন্মের পরপর হেক্সিসল একবার দিয়ে দিতে হবে। এর পর নাভিকে শুষ্ক রাখবে। এর পর কোনো ধরনের কোনো ওষুধ দেওয়া যাবে না। নাভিতে কোনো কিছু পেঁচানো যাবে না। তাতে সংক্রমণ হবে না। বারবার বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : নবজাতককে দৈনিক কতবার বুকের দুধ দিতে হবে?
উত্তর : বাচ্চা কাঁদলেই বুকের দুধ দিতে হবে এবং রাতের বেলাতেও বুকের দুধ দিতে হবে। আর কমপক্ষে বাচ্চাকে আটবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
প্রশ্ন : ঋতুভেদে নবজাতকের পরিচর্যার বিষয়টি কীভাবে করতে হবে?
উত্তর : গরমের দিনে কোনো সমস্যা নেই। বাচ্চাকে তো সব সময় উষ্ণ আবহাওয়ায় রাখতে হবে। শীতকালে একটু বেশি কাপড়চোপড় দিয়ে বাচ্চাকে মুড়িয়ে রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ দিতে হবে। হাত-পায়ে মোজা দিতে হবে, যাতে বাচ্চার শীত না লাগে, এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যে বাচ্চটা যেন না ঘামে। ঘাম থেকে বেশির ভাগ বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যায়।
প্রশ্ন : সামগ্রিকভাবে একজন মা কীভাবে বুঝতে পারবেন, আমার পরিচর্যাটা ঠিক হচ্ছে না?
উত্তর : মা যদি বুকের দুধ খাওয়ান, বাচ্চাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুস্থ থাকে। প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। যদি মনে করেন নাক বন্ধ আছে, সেটি পরিষ্কার করতে হবে।
আর কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, যাকে আমরা বলি বিপদ চিহ্ন। এর মধ্যে হলো বাচ্চটা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে কি না। বাচ্চার কোনো জ্বর এসেছে কি না। বাচ্চাটার বেশি ঠান্ডা লেগেছে মনে হচ্ছে কি না। বাচ্চাটির কোনোরকম শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না বা বুক দেবে যাচ্ছে কি না। এ রকম কিছু দেখলে বাচ্চাকে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
প্রশ্ন : বিপদ চিহ্ন দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি আপনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন?
উত্তর : চিহ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন : নবজাতকের গোসলের কী কী বিষয়ে লক্ষ রাখা উচিত?
উত্তর : নবজাতকের গোসলের ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে একটু হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। প্রথমে মাথাটা ধোয়ার পর মাথা মুছে ফেলবেন। এর পর শরীরে পানি দিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যে গোসল করিয়ে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন : অনেকে পানিতে জীবাণুনাশক জাতীয় জিনিস মেশায়। এটি কি ঠিক?
উত্তর : না, মেশাতে হবে না। যদি এ রকম হয়, সে ক্ষেত্রে ফুটানো পানি ঠান্ডা করে আমরা নবজাতককে গোসল দিতে পারি। তবে কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
প্রশ্ন : অনেক ক্ষেত্রে শিশুকে ডায়াপার পরানো হয়। নবজাতকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এই পণ্যগুলোর কী ধরনের ভূমিকা আছে?
উত্তর : ডায়াপার আমরা ব্যবহার করতে পারি। তবে আমরা আসলে যেভাবে ডায়াপার ব্যবহার করি, এটা ঠিক উপায়ে না। সে ক্ষেত্রে বাচ্চা একবার প্রস্রাব করলেই ডায়াপার পরিবর্তন করে দিতে হবে। আমাদের দেশের মায়েরা কী করে? ডায়াপারটি ওজন করতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত ভারী না হয়। এই বিষয়টি বাচ্চার জন্য খুবই অস্বস্তির। এমনকি অনেক সময় পায়খানা করার পর এটার ওপর বাচ্চাকে দীর্ঘ সময় রেখে দেওয়া হচ্ছে। একবার প্রস্রাব অথবা পায়খানা করলেই যদি ডায়াপার পরিবর্তন করে দেওয়া যায়, তাহলে ক্ষতির কিছু নেই।
প্রশ্ন : বাচ্চা জন্মের পর প্রস্রাব-পায়খানা কতবার হলে স্বাভাবিক? কীভাবে আমরা বুঝব?
উত্তর : একটা বাচ্চা যদি ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার প্রস্রাব করে বুঝতে হবে, সে দুধ পর্যাপ্ত পাচ্ছে। এটা ঠিক আছে। আর যে বাচ্চাটি বুকের দুধ খায়, সে বারবারই পায়খানা করতে পারে। ১০ থেকে ১৫ বারও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।